যশোর ব্যুরো: যশোরের মনিরামপুরের তাহেরপুর সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রিপা খাতুন। গেল বছর সরকারি খাস জমিতে একটি ঘর পেয়ে পরিবার নিয়ে সেখানে উঠেছেন তিনি। সরকারি ঘর পেলেও এ নারীর ভাগ্যে জোটেনি জমির মালিকানা।
ঘরে ওঠার সময় নায়েবের কথামতো জমির দলিল খরচ হিসেবে ২ হাজার ২৯০ টাকা দিয়েছেন তিনি। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার এর বছর পার হয়েছে রিপা খাতুনের। আজও জমির মালিকানা স্বত্ব পাননি তিনি।
রিপা খাতুনের মতো তাহেরপুর পল্লীতে অজুবা বেগম ও রাবেয়া বেগমসহ বসবাস ৭টি ভূমিহীন পরিবারের। তাঁরা সবাই ২ হাজার ২৯০ টাকা করে দলিল খরচ দিয়েছেন। কিন্তু মালিকানা স্বত্ব মেলেনি এ পল্লীর কারও।
রিপা খাতুন বলেন, আমাদের কিছু নেই। তাহেরপুরে খাস জমিতে বহু বছর ধরে আছি। আগে নিজেদের ঝুপড়ি ঘরে থাকতাম। এক বছর আগে আমাদের ঘর ভেঙে দিয়ে সরকার পাকা ঘর করে দিছে। নতুন ঘরে উঠেছি এক বছর হয়। তখন পৌরসভার নায়েব জমির দলিল দেবে বলে ২ হাজার ২৯০ টাকা নিয়েছেন। গতবছর জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে শুনিছি। আমাদের কোনো কাগজপত্র দেয়নি। নায়েব অফিসে গেলে আজ না কাল করে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
পৌর এলাকার হাকোবা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের সরকারি ঘর রয়েছে ১৬টি। এ পল্লীর বাসিন্দারা ঘরে উঠেছেন ১১ মাস আগে। তাঁরাও জমির কোনো কাগজপত্র পাননি।
ওই পল্লীর ৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা রুমা বেগম। তিনি বলেন, শুধু ঘর দিছে। আমাদের কাছ থেকে দলিল বাবদ কোনো খরচ নেয়নি। কোনো কাগজপত্রও দেয়নি। দলিল দেবে কি দেবে না কিচ্ছু জানি না।
একই বক্তব্য হাকোবা আশ্রয়ণ পল্লীর গৃহবধূ রুপালি ও নাজমা খাতুনের। তাঁরা বলেন, একবার সরকারি লোক এসে আমাদের ঘরে তুলে দিয়ে গেছে। এরপর থেকে জমির দলিলের ব্যাপারে আমাদের কোনো দিন ডাকেনি।
গেল বছর মনিরামপুরে বিভিন্ন এলাকায় খাস জমিতে ভূমিহীনদের জন্য সরকারি ২৯২টি ঘর নির্মিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের তত্ত্বাবধানে দুই শতক জমির উপরে নির্মিত প্রতিটি চারচালা ঘরে রয়েছে পাকা শৌচাগার, রান্না ঘর, বারান্দাসহ দুটি কক্ষ।
গেল বছর জানুয়ারি থেকে মার্চে ঘরগুলো হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। ভূমিহীনদের নামে দুই শতক জমি নিবন্ধন করে ঘর হস্তান্তরের সময় জমির দলিল হস্তান্তর করার কথা থাকলেও পৌর এলাকার বাসিন্দাদের বেলায় তা কার্যকর হয়নি।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকার তাহেরপুর ও হাকোবা এলাকায় নির্মিত ২৩টি ঘর মালিকের কেউ এখনো জমির মালিকানা স্বত্ব হাতে পাননি।
তবে উপজেলা ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৌর এলাকায় মোট ৩৮টি সরকারি ঘর হয়েছে। তাঁদের কাউকে এখনো দলিল দেওয়া হয়নি। কাগজপত্র ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মনিরামপুর পৌরসভা ভূমি অফিসের সাবেক সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (বর্তমান কর্মস্থল যশোর সদর) হাদিউজ্জামান বলেন, জমির নিবন্ধন, নামজারি ও নকল তোলা বাবদ তাহেরপুর আশ্রয়ণ পল্লীর বাসিন্দাদের কাছ থেকে ২ হাজার ২৯০ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। জমি বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় তাঁদের কাগজপত্র ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মনিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, পৌর এলাকার সরকারি জমিগুলো অকৃষি খাস জমি। এগুলো জেলা প্রশাসক বরাদ্দ দিতে পারেন না। এজন্য ভূমিহীনদের জন্য নির্ধারণ করা জমির কাগজপত্র (৩৮টি ফাইল) ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অধিকতর তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয় প্রথমবার ফাইল ফেরত দিয়েছেন। আমরা আবার কাগজপত্র ঠিক করে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে বরাদ্দ পেলে ভূমিহীনদের জমির দলিলপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ব্যাপারে এ কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দিকে দলিলের নকল তুলতে হয়তো বাড়তি কিছু টাকা নেওয়া হয়েছিল। এখন আমরা ভাবছি নকল তোলা বাদে জমির কাগজপত্র বুঝে পাবেন ভূমিহীনরা। তাছাড়া দলিল করতে যে খরচ হচ্ছে সে টাকা সরকার দিয়ে দিয়েছেন। দলিলের সাথে ১ হাজার ২০০ টাকা করে ফেরত পাবেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।